en

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাকে বলে ? বহুল প্রচলিত দুর্যোগ সমূহ

জলবায়ুর প্রতিটি উপাদান প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। জলবায়ুর কোন উপাদান যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হয় তখন আমরা বিরূপ আবহাওয়া দেখে থাকি। বিরূপ আবহাওয়া মারাত্মক আকার ধারণ করলে তা প্রাকৃতিক দূর্যোগে পরিণত হয়। আমাদের দেশে আবহাওয়াজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বেশি দেখা যায় বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রবৃষ্টি ও টর্নেডো ইত্যাদি। নিম্নে এসব বিপর্যয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।১) বন্যা - বর্ষার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বন্যা বলে। বর্ষাকালে বাংলাদেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় খাবার পানীয় জলের অভাব এবং বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়।

মানুষসহ বিভিন্ন গবাদি পশুর দুর্ভোগের সীমা থাকে না। তাই এ সময় আমাদের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ, চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ প্রদান পদ্ধতি চালু রাখতে হবে। আর দূর্যোগগত সমস্যা মোকাবেলায় দূর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

২) খরা - অস্বাভাবিক কম বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে খরা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তর - পশ্চিম অঞ্চলে খরা সৃষ্টি হয়। খরার কারণে মানুষসহ পশুপাখির বিভিন্ন ক্ষতি হয়।

মাঠে ফসল হয় না ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তাই এ সময়ে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও দুর্যোগগত ক্ষতি মোকাবেলায় দুর্গতদের পুনর্বাসন ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৩) কালবৈশাখী - গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে যে বজ্রবৃষ্টি হয় তাই কালবৈশাখি নামে পরিচিত। স্থলভাগ অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলেই কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়। সাধারণত বিকেল বেলায় কালবৈশাখি ঝড় বেশি হয়। এ ঝড় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত হতে পারে।

সঞ্চারণশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয়। পরবর্তীতে এই মেঘ ঘনীভূত হয়ে ঝড়ো হাওয়া, ব্জ্রঝড়, ভারী বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে। এটাই কালবৈশাখী। কালবৈশাখীতে মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যায়, বড় বড় গাছ পড়ে যায়। বিদ্যুৎ থাকে না, ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

৪) ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস - এই ঝড়কে সাইক্লোন বা টাইফুন বলা হয়। ঘুণিঝড় অতিরিক্ত নিম্নচাপের কারণে সৃষ্টি হয়। ঘুনিঝড়ের উৎপত্তি সাধারণত মহাসাগরে। বাংলাদেশে যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে সেগুলো ভারত মহাসাগর বা বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ থেকে সৃষ্টি হয়।

প্রতিবছর বাংলাদেশে ঘুনিঝড়ের আঘাতে বাড়িঘর, খেতের ফসল, মাছের খামার, ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়। মানুষ ও গবাদি পশু মারা যায়। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র থেকে ঢেউ আকারে লবণাক্ত পানি উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবেশ করে। একে জলোচ্ছ্বাস বলে।

আমাদের দেশে ঘুনিঝড়ের ও জলোচ্ছাসের কারণে প্রতি বছর অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। তাই এ পরিবেশগত বির্পযয় ও দূর্যোগগত সমস্যা মোকাবেলার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। দূর্যোগকালীন সমস্যা মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ও শুকনো খাবার মজুদ রাখা।

দূর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য তরুণদের কাজে লাগাতে হবে, সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে, সরকারকে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক অনুদান দিতে হবে এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

৫) টর্নেডো - টর্নেডো হল দরু,ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়। যেমন - ঘরবাড়ির ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, দেয়াল ভেঙে যেতে পারে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। শক্তিশালী টনের্ডো বড় বড় স্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে।

৬) শিলাবৃষ্টি - বাংলাদেশে প্রতি বছর কোন না কোন অঞ্চলে শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে। শিলাবৃষ্টির কারণে ঘরের টিন ফুটো হয়ে যায়, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। শিলাবৃষ্টি হওয়ার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যায়।

গরিব লোকদের খাবার জোগাড় করতে হয়। তাই ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও ও সচেতন নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। আর্থিক অনুদানসহ তাদের পুনবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭) ভুমিকম্প - সাম্প্রতিককালে প্রায়শই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুন:পুন: ভুমিকম্পন অনুভূত হয়। অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ভুমিকম্পন। কারন ভুমিকম্পন মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ভেঙে শেষ করে দিতে পারে।

ভুমিকম্প কখন হবে সেটা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। তাই কেউ আগে থেকে সতর্ক বা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারে না। অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগে আবহাওয়া অফিস জনসাধারণকে বিভিন্ন মাধ্যমে সতর্ক সংকেত দিয়ে আগে থেকে সবাইকে সাবধান করতে পারে।

কিন্তু ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৪ - ৭.৮ হলে তা সবার জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। এই মাত্রার ভুমিকম্পন মুহূর্তের মধ্যে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বড় বড় দালান ভেঙে যায়। দালানের নিচে চাপা পড়ে অনেক মানুষ মারা যায়।

তাই ভুমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। পরবর্তীতে দূর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মিলেমিশে পরিচালনা করতে হবে। তাছাড়া ভুমিকম্পনে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য দুযোগপূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা বাড়িতেই রাখতে হবে।

দুযোগকালীন প্রস্তুতি হিসেবে পাকা দালানের বিমের পাশে দাঁড়াতে হবে, বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। দুর্যোগ পরবর্তী প্রস্তুতি হিসেবে আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করা যাবে না, খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।

আরও পড়ুন:-

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো